কুরআন ও হাদীসের আলোকে নামাজ

কুরআন ও হাদিসের আলোকে নামাজ প্রতিটি মুসলমানের জন্য অবশ্য কর্তব্য। নামাজ হলো ইসলাম ধর্মের পাঁচটি মূল স্তম্ভের একটি।প্রতিদিন প্রতিটি মুসলমানকে অবশ্যই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হবে। 

কুরআন-ও-হাদীসের-আলোকে-নামাজ


এই পোস্টে আমরা দেখব কুরআন ও হাদিস নামাজ সম্পর্কে কি কি বলেছে। তার সঙ্গে আমরা এও দেখব নামাজ যদি কেউ আদায় না করে তাহলে কুরআন ও হাদিসের আলোকে তার শাস্তি কি কি।

পোস্ট সূচিঃ (যে অংশটি পড়তে চান সে অংশে ক্লিক করুন)

কুরআনের আলোকে নামাজ

কুরআন-ও-হাদীসের-আলোকে-নামাজ


কুরআনে নামাজ (সালাত) নিয়ে অনেক নির্দেশনা ও উপদেশ রয়েছে, যা মুসলমানদের জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে প্রাধান্য পায়। নামাজের বিষয়ে কুরআনের উল্লেখযোগ্য কিছু আয়াত হলো:

  • নামাজ কায়েম করার আদেশঃ কুরআনে বারবার বলা হয়েছে যে মুসলমানদের অবশ্যই নামাজ কায়েম করতে হবে:
  • নিয়মিত নামাজ আদায় করার তাগিদঃ কুরআনে নিয়মিতভাবে নামাজ আদায় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে:
  • নামাজের গুরুত্ব ও মর্যাদাঃ আল্লাহ তাআলা নামাজকে মুমিনের সাফল্যের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন:
  • নামাজে মনোযোগ বজায় রাখাঃ কুরআনে নামাজে মনোযোগী হওয়ার গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং সতর্ক করা হয়েছে যে যারা অলসভাবে নামাজ পড়ে তাদের জন্য বিপদ রয়েছে।
  • নামাজের সময় নির্ধারণঃ কুরআনে বলা হয়েছে যে নামাজ নির্দিষ্ট সময়ে আদায় করতে হবে।
  • ফজরের ও মাগরিবের নামাজের বিশেষ গুরুত্বঃ বিশেষ করে ফজর ও মাগরিবের নামাজের গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
  • নামাজ আল্লাহর স্মরণঃ কুরআনে আল্লাহ বলেছেন যে নামাজ তাকে স্মরণ করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
  • নামাজ ছেড়ে দেয়ার শাস্তিঃ কুরআনে বলা হয়েছে যে, যারা ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ছেড়ে দেয় তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তির।
  • পরিবারের সদস্যদের নামাজের জন্য আদেশঃ কেবল নিজে নামাজ পড়াই নয় বরং পরিবারের সকল সদস্যকে নামাজের আদেশ দেওয়ার নির্দেশও রয়েছে:
  • নামাজে স্থিরতা ও মনোযোগ বজায় রাখাঃ আল্লাহ তাআলা নামাজে খুশু (বিনম্রতা ও মনোযোগ) বজায় রাখার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেছেন:
  • কিয়ামতের দিন নামাজের হিসাবঃ হাদিসে উল্লেখ রয়েছে যে কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব নেওয়া হবে, আর কুরআনে বারবার সতর্ক করা হয়েছে যারা নামাজে অবহেলা করে তাদের জন্য শাস্তি নির্ধারিত:

"নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।" (সূরা আনকাবুত, ২৯:৪৫)

"তোমরা নামাজ কায়েম করো এবং যাকাত প্রদান করো এবং রুকু করার মাধ্যমে আল্লাহর সামনে বিনয় প্রকাশ করো।" (সূরা বাকারা, ২:৪৩)

"নিশ্চয়ই যারা মুমিন, তারা সেই সকল লোক, যারা আল্লাহকে স্মরণ করতে দেরি করে না এবং নামাজ আদায়ে অবহেলা করে না।" (সূরা মুনাফিকুন, ৬৩:৯)

"নিশ্চয়ই সাফল্য লাভ করেছে মুমিনগণ, যারা তাদের নামাজে বিনয়াবনত থাকে।" (সূরা মুমিনুন, ২৩:১-২)

"অতএব, দুর্ভোগ তাদের জন্য যারা তাদের নামাজে গাফেল।" (সূরা মাউন, ১০৭:৪-৫)

"নিশ্চয়ই নামাজ মুসলমানদের জন্য নির্দিষ্ট সময়ে ফরজ করা হয়েছে।" (সূরা নিসা, ৪:১০৩)

"ফজরের নামাজ কায়েম করো এবং রাতের শেষ প্রহরে কুরআন তিলাওয়াত করো।" (সূরা আল ইসরাঈল, ১৭:৭৮)

"নিশ্চয়ই আমিই আল্লাহ; আমি ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই। অতএব তুমি আমার ইবাদত করো এবং আমার স্মরণে নামাজ কায়েম করো।" (সূরা ত্ব-হা, ২০:১৪)

"এরপর তাদের পরে এমন লোক এলো যারা নামাজ বিসর্জন দিলো এবং তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করলো। ফলে তারা অচিরেই বিভ্রান্তিতে পতিত হবে।" (সূরা মারইয়াম, ১৯:৫৯)

"আপনার পরিবারকে নামাজের আদেশ দিন এবং নিজেও এর উপর প্রতিষ্ঠিত থাকুন।" (সূরা ত্ব-হা, ২০:১৩২)

"এমন কোনো মুমিন নেই যারা নামাজে খুশু সহকারে উপস্থিত থাকে না।" (সূরা মুমিনুন, ২৩:২)

"যখন বলা হবে, তাদেরকে কী কারণে জাহান্নামে আনা হয়েছে? তারা বলবে, আমরা নামাজ আদায় করতাম না।" (সূরা মুদ্দাসির, ৭৪:৪২-৪৩)

  • নামাজ মুমিনদের জন্য সুরক্ষাকবচঃ কুরআনে নামাজকে মুমিনদের জন্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যা তাদেরকে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা করে:
  • নামাজে নিয়মিত থাকার গুরুত্বঃ নামাজ নিয়মিতভাবে আদায় করার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে:
  • রাতে তাহাজ্জুদ নামাজের আদেশঃ বিশেষ করে রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে:
  • বিভিন্ন প্রকার নামাজের সময় উল্লেখঃ কুরআনে নামাজের বিভিন্ন সময় সম্পর্কে বলা হয়েছে এবং বিশেষভাবে বলা হয়েছে সকাল, সন্ধ্যা ও রাতের অংশে নামাজ পড়ার কথা:
  • নামাজের উদ্দেশ্য আত্মার পরিশুদ্ধিঃ কুরআনে নামাজকে আত্মার পরিশুদ্ধির একটি মাধ্যম হিসেবে দেখানো হয়েছে, যা মানুষের ভেতরের খারাপ প্রবৃত্তিকে দমন করে:

"আর শয়তানের কুমন্ত্রণার বিরুদ্ধে রক্ষা পাওয়ার জন্য ধৈর্য ও নামাজের সাহায্য নাও।" (সূরা বাকারা, ২:৪৫)

"তারা এমন নয় যে অলসভাবে নামাজ পড়ে।" (সূরা নিসা, ৪:১৪২)

"রাতের কিছু অংশ তাহাজ্জুদ নামাজে কাটাও, এটি তোমার জন্য অতিরিক্ত ইবাদত। আশা করা যায় তোমার রব তোমাকে প্রশংসিত অবস্থানে উন্নীত করবেন।" (সূরা আল ইসরাঈল, ১৭:৭৯)

"সকাল সন্ধ্যায় তোমার রবের নাম স্মরণ করো।" (সূরা আহযাব, ৩৩:৪১)

"আর যারা শুদ্ধ থাকে, তারা সফলকাম হবে।" (সূরা আ'লা, ৮৭:১৪-১৫)

হাদীসের আলোকে নামাজ

কুরআন-ও-হাদীসের-আলোকে-নামাজ


নামাজ নিয়ে বিভিন্ন হাদিসে অসংখ্য উপদেশ, নির্দেশনা ও গুরুত্বের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে কিছু উল্লেখযোগ্য হাদিস তুলে ধরা হলো:

১. নামাজ ইসলামের স্তম্ভঃ ইসলাম ধর্মের পাঁচটি মূল স্তম্ভের অন্যতম হলো নামাজ। হাদিসে নামাজকে ইসলামের ভিত্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে:

"ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত: এ সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসুল; নামাজ কায়েম করা; যাকাত দেওয়া; রমজান মাসের রোজা রাখা এবং হজ পালন করা।"
(সহীহ বুখারি, হাদিস নম্বর: ৮)

২. সর্বপ্রথম হিসাব হবে নামাজেরঃ হাদিসে বলা হয়েছে যে কিয়ামতের দিন মানুষের আমলের মধ্যে সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব নেওয়া হবে:

"কিয়ামতের দিন বান্দার আমলের মধ্যে প্রথম যে বিষয়টির হিসাব নেওয়া হবে তা হলো নামাজ। যদি নামাজ ঠিক থাকে, তাহলে অন্যান্য আমলও ঠিক থাকবে। আর যদি নামাজ ঠিক না থাকে, তবে অন্যান্য আমলও বিফল হবে।"
(সুনান আত-তিরমিজি, হাদিস নম্বর: ৪১৩)
"তুমি যখন নামাজ পড়বে, তখন অবশ্যই তা তোমাকে অশ্লীলতা ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখবে।"
(সহীহ মুসলিম)
"রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমরা কি মনে করো, কারো ঘরের সামনে যদি একটি নদী থাকে এবং সে প্রতিদিন পাঁচবার সে নদীতে গোসল করে, তার দেহে কোনো ময়লা থাকবে? সাহাবিরা বললেন, না, তার শরীরে কোনো ময়লা থাকবে না। তখন তিনি বললেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এরূপ; এর মাধ্যমে আল্লাহ পাপসমূহ মোচন করে দেন।"
(সহীহ বুখারি, হাদিস নম্বর: ৫২৮)
"যে ব্যক্তি ফজর ও আসরের নামাজ আদায় করে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।"
(সহীহ বুখারি, হাদিস নম্বর: ৫৪৮)
"আমাদের ও তাদের মধ্যে পার্থক্য হলো নামাজ। যে নামাজ ছেড়ে দিল, সে কুফরি করলো।"
(সহীহ মুসলিম, হাদিস নম্বর: ৮২)
"আল্লাহ তাঁর বান্দার নামাজে মনোযোগ দেখে তাকে পুরস্কৃত করেন। তাই যত বেশি মনোযোগ ও বিনয় সহকারে নামাজ পড়া হয়, তত বেশি সওয়াব পাওয়া যায়।"
(সহীহ মুসলিম)

৩. নামাজ অশ্লীলতা ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখেঃ হাদিসে কুরআনের আয়াতের অনুরূপভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে নামাজ মানুষকে খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে:

৪. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পাপ মোচন করেঃ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে একজন মুমিনের পাপ মোচন হয় বলে হাদিসে বলা হয়েছে:

৫. ফজর ও আসরের নামাজের গুরুত্বঃ বিশেষভাবে ফজর ও আসরের নামাজের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে:

৬. নামাজ ছেড়ে দেয়ার শাস্তিঃ যারা নামাজ ইচ্ছাকৃতভাবে ছেড়ে দেয়, তাদের বিষয়ে কঠোর সতর্কতা দেওয়া হয়েছে:

৭. নামাজে খুশু (মনোযোগ) বজায় রাখাঃ নামাজে খুশু (বিনয় ও মনোযোগ) বজায় রাখার গুরুত্ব হাদিসে বারবার উল্লেখ করা হয়েছে:

৮. জামাতে নামাজের সওয়াবঃ জামাতে নামাজ আদায়ের বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং একে এককভাবে নামাজ পড়ার চেয়ে বেশি মর্যাদাসম্পন্ন বলা হয়েছে:

"জামাতে নামাজ আদায় করার সওয়াব এককভাবে নামাজ পড়ার চেয়ে ২৭ গুণ বেশি।"

(সহীহ বুখারি, হাদিস নম্বর: ৬৪৫)

৯. তাহাজ্জুদ নামাজঃ রাতের বেলায় তাহাজ্জুদ নামাজের বিশেষ ফজিলত আছে:

"তোমরা রাতের নামাজ আদায় করো, কেননা এটি তোমাদের পূর্ববর্তী নেক লোকদের অভ্যাস ছিল এবং এটি তোমাদের জন্য আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম।"

(সুনান ইবন মাজাহ, হাদিস নম্বর: ১৩৩৪)

১০. নামাজে দেরি না করাঃ নামাজ যথাসময়ে আদায় করার জন্য গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে:

"আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় কাজ হলো নামাজকে তার নির্ধারিত সময়ে আদায় করা।"

(সহীহ বুখারি, হাদিস নম্বর: ৫৫৭)

১১. নামাজে স্থিরতা ও শান্তি বজায় রাখাঃ নামাজে দ্রুততা না করে ধীরে ধীরে, বিনয়ের সাথে এবং স্থিরতা বজায় রেখে নামাজ আদায় করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে:

"একজন ব্যক্তি দ্রুততার সাথে নামাজ আদায় করছিলো। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে দেখে বললেন, তুমি আবার ফিরে গিয়ে নামাজ পড়ো, কারণ তুমি সঠিকভাবে নামাজ পড়োনি।"

(সহীহ বুখারি, হাদিস নম্বর: ৭৫৭)

১২. নামাজে মনোযোগ ও খুশু রাখার ফজিলতঃ নামাজে মনোযোগ ও খুশু বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হাদিসে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে:

"যদি কেউ নামাজে একাগ্রচিত্ত থাকে এবং খুশু (বিনয়) সহকারে আল্লাহর সামনে দাঁড়ায়, তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।"

(সহীহ বুখারি)

১৩. নামাজের সময় অজু ও পবিত্রতার গুরুত্বঃ নামাজের আগে পবিত্রতা রক্ষা করা এবং সঠিকভাবে অজু করার জন্য বিশেষ তাগিদ দেওয়া হয়েছে:

"নামাজের জন্য অজু সম্পূর্ণরূপে করো, কারণ এটি তোমাদের জন্য একটি পরিশুদ্ধি এবং নামাজে প্রস্তুতির অন্যতম মাধ্যম।"

(সহীহ মুসলিম, হাদিস নম্বর: ২২৫)

১৪. নামাজে সঠিক কিরাত পড়ার গুরুত্বঃ নামাজে সঠিকভাবে কিরাত (কুরআনের আয়াত) পড়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে:

"তোমরা নামাজে কুরআন সঠিকভাবে তিলাওয়াত করো এবং আল্লাহর প্রতি মনোযোগী হও।"

(সহীহ বুখারি)

১৫. অসুস্থ অবস্থায় নামাজঃ এমনকি অসুস্থ অবস্থায়ও নামাজ ছাড়ার অনুমতি নেই। হাদিসে বলা হয়েছে, অসুস্থ অবস্থায় কেউ নামাজ পড়তে না পারলে বসে অথবা শুয়ে পড়তে পারে:

"রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ো। আর যদি না পারো তবে বসে পড়ো। আর যদি তাতেও না পারো তবে শুয়ে পড়ো।"

(সহীহ বুখারি, হাদিস নম্বর: ১০৬৬)

১৬. ফজরের নামাজের বরকতঃ ফজরের নামাজের বিশেষ ফজিলত হাদিসে বারবার উল্লেখিত হয়েছে:

"যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ পড়ে, সে আল্লাহর হেফাজতে থাকে।"

(সহীহ মুসলিম, হাদিস নম্বর: ৬৫৭)

১৭. রাত্রিকালে বিশেষ নামাজ (কিয়ামুল লাইলঃ রাতে উঠে নামাজ আদায় করা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন:

"প্রতিদিন রাতে আল্লাহ তা’আলা প্রথম আসমানে নেমে আসেন এবং বলেন, কোনো ব্যক্তি আছে কি, যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আর আমি তাকে ক্ষমা করবো?"

(সহীহ মুসলিম, হাদিস নম্বর: ৭৫৮)

১৮. ফরজ নামাজের বাইরে অতিরিক্ত নামাজঃ ফরজ নামাজের পর অতিরিক্ত নফল নামাজ আদায়ের জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে:

"বান্দা যত বেশি নফল ইবাদত করবে, আল্লাহ তাকে তত বেশি নিজের নৈকট্যে নিয়ে যাবেন।"

(সহীহ বুখারি)

১৯. আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের মাধ্যমঃ হাদিসে বলা হয়েছে, নামাজ মানুষের আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের একটি মাধ্যম:

"নামাজ হলো মুমিনের মিরাজ (আধ্যাত্মিক উত্থান)।"

(সুনান ইবন মাজাহ)

২০. নামাজের সময় দোয়া কবুল হওয়ার সময়ঃ হাদিসে উল্লেখ আছে, নামাজের সময়, বিশেষ করে সেজদার সময়, আল্লাহ বান্দার দোয়া কবুল করেন:

"সেজদার সময় বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে নিকটে থাকে। অতএব বেশি বেশি দোয়া করো।"

(সহীহ মুসলিম, হাদিস নম্বর: ৪৮২)

এই হাদিসগুলো থেকে বোঝা যায়, নামাজ কেবল একটি ইবাদত নয় বরং এটি মানুষের আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধি, আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ, এবং প্রতিদিন আল্লাহর সাথে সম্পর্ক গভীর করার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। আল্লাহর রহমত ও নৈকট্য অর্জনের জন্য এবং আত্মিক উন্নতির জন্য নামাজের বিশেষ গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছে।

নামাজ আদায় না করার শাস্তি

নামাজ না পড়া বা নামাজ ছেড়ে দেওয়ার শাস্তি সম্পর্কে কুরআন এবং হাদিসে কঠোর সতর্কবাণী দেওয়া হয়েছে। এখানে কিছু কুরআনের আয়াত ও হাদিস উল্লেখ করা হলো, যেগুলোতে নামাজ না পড়ার শাস্তির কথা বলা হয়েছে:

কুরআন থেকে

১. জাহান্নামের শাস্তি: কুরআনে বলা হয়েছে যে যারা ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ছেড়ে দেয়, তাদের জন্য কঠোর শাস্তি রয়েছে:
২. নামাজ ত্যাগকারীদের জন্য হতাশার ঘোষণাঃ কুরআনে বলা হয়েছে যে যারা নামাজে গাফেল, তাদের জন্য দুর্ভোগ রয়েছে:
"অতএব দুর্ভোগ তাদের জন্য, যারা তাদের নামাজের ব্যাপারে গাফেল।"
৩. নামাজ ছেড়ে দিলে বিভ্রান্তিঃ কুরআনে নামাজ ত্যাগকারীদের সম্পর্কে বলা হয়েছে যে তারা বিভ্রান্তিতে পতিত হবে:
"এরপর তাদের পরে এমন বংশধর এলো, যারা নামাজ ত্যাগ করলো এবং নিজেদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করলো। তারা অচিরেই (বিপদের) সম্মুখীন হবে।"

"জাহান্নামে অবস্থিত অপরাধীদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে, 'তোমাদেরকে জাহান্নামে কে নিয়ে এসেছে?' তারা বলবে, 'আমরা নামাজ আদায় করতাম না...।'"
(সূরা আল-মুদ্দাসসির, ৭৪:৪২-৪৩)
(সূরা মাউন, ১০৭:৪-৫)
(সূরা মারিয়াম, ১৯:৫৯)

হাদিস থেকে

১. কুফরের সঙ্গে তুলনাঃ রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন যে, নামাজ ছেড়ে দেওয়া কুফরির (অবিশ্বাস) সমান:

"আমাদের এবং কাফেরদের মধ্যে পার্থক্য হলো নামাজ। যে ব্যক্তি নামাজ ছেড়ে দিল, সে কাফের হয়ে গেল।"
(সহীহ মুসলিম, হাদিস নম্বর: ৮২)

২. আল্লাহর নৈকট্য হারানোঃ যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ছাড়ে, সে আল্লাহর নৈকট্য হারায় এবং আল্লাহ তার প্রতি অসন্তুষ্ট হন:

"যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ছেড়ে দেয়, সে আল্লাহর নিকট থেকে মুক্তি লাভ করবে না।"
(সুনান ইবন মাজাহ, হাদিস নম্বর: ৪০২)

৩. কবরের শাস্তিঃ হাদিসে উল্লেখ আছে যে কবরের শাস্তি অনেক ক্ষেত্রেই নামাজ না পড়ার কারণে হয়:

"নবী করিম (সা.) বলেছেন, 'যখন এক ব্যক্তি তার নামাজ সময়মতো আদায় করে না, তখন তার কবর এমনভাবে সংকুচিত হয়ে যায় যে, তার পাঁজরের হাড় একে অপরের সঙ্গে মিশে যায়।'"
(মুসনাদ আহমদ)

৪. আল্লাহর কাছে বিশেষভাবে অনুরোধঃ রাসুলুল্লাহ (সা.) আল্লাহর কাছে বিশেষভাবে অনুরোধ করেছিলেন, যেন তাঁর উম্মতের কেউ নামাজ না ছেড়ে দেয়:

"নবী করিম (সা.) আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন, হে আল্লাহ! আমার উম্মতকে নামাজ ছেড়ে দেওয়া থেকে রক্ষা করুন।"
(সহীহ বুখারি)
৫. ফজরের ও আসরের নামাজ না পড়ার শাস্তিঃ রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন যে ফজরের ও আসরের নামাজ পড়বে না, সে অনেক বড় ক্ষতির সম্মুখীন হবে:
"যে ব্যক্তি আসরের নামাজ পড়ে না, তার সমস্ত আমল ধ্বংস হয়ে যাবে।"
(সহীহ বুখারি, হাদিস নম্বর: ৫৫৩)
৬. নামাজ ছেড়ে দিলে আল্লাহর আশ্রয় থেকে বঞ্চিত হওয়া: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,
"নামাজ ছেড়ে দেওয়া আল্লাহর আশ্রয় ও নিরাপত্তা হারানোর একটি বড় কারণ।"
(তিরমিজি, হাদিস নম্বর: ২৬২১)
কুরআন ও হাদিসে বারবার বলা হয়েছে যে নামাজ ইসলামের ভিত্তি এবং এটি ত্যাগ করা হলে একজন মুসলমান মারাত্মক শাস্তির সম্মুখীন হতে পারে। যারা নামাজের গুরুত্ব বুঝে না এবং তা পালন করে না, তারা আল্লাহর নৈকট্য ও রহমত থেকে বঞ্চিত হয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

স্বপ্নকথার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url